
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীতে এক প্রকৌশলী কর্তৃকপানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বাঁধের ঢালে লাগানো প্রায় তিন হাজারেরও বেশি তরমুজ চারা কেটে ফেলায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ঘটনা তদন্তে নেমেছে উপজেলা প্রশাসন।
জেলার কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম ধুলাস্বার গ্রামের কৃষক দেলোয়ার খলিফা তার বাড়ির কাছে এই তরমুজ আবাদ করছিলেন।
গেলো রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ রক্ষা প্রকল্পের মাঠ প্রকৌশলী মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তরমুজ চারা কাটার এই অভিযোগ ওঠে।
এর দু’দিন পর মঙ্গলবার কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
ইউএনও উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “তরমুজ চারা কেটে ফেলার ঘটনা নজরে আসায় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরামর্শে আমি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।
“ওই কৃষক বেড়িবাঁধের ঢালে তরমুজ চারা রোপণ করেছিলেন। জায়গাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাটা বনবিভাগকে দিয়েছিল বনায়নের জন্য।
ইউএনও কৃষি বিভাগের প্রাথমিক জরিপের বরাতে বলেন, “ওই কৃষক আটশ গর্তে চারা রোপণ করেছিলেন। প্রতিটি গর্তে চারটি করে চারা রোপণ করা হয়। আনুমানিক তিন হাজার দুইশ চারা লাগানো হয় সেখানে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন বিভাগের কতিপয় লোকজন তরমুজ চারা লাগানোর বিষয়টি জানতেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
“ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী সবাই একই কথা বলেছেন যে, ওই কৃষক কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে ঢালে তরমুজের চাষ করেছেন। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ওই কৃষকের খরচ হয়েছে। ভালো ফলন পেলে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকার তরমুজ উৎপাদন হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
ইউএনও দু-এক দিনের মধ্যেই পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে জানান।
পরিদর্শনের সময় ইউএনও’র সাথে এলাকার জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন। তবে বন বিভাগের লোকজন কেউ আসেননি বলেও জানান ইউএনও।
কৃষক দেলোয়ার খলিফা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালে বিভিন্ন সবজি চাষ করে আসছেন। “বনবিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্যারদের অনুমতি নিয়ে দুই মাস আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে তরমুজ চারা লাগাই। এ জন্য এখানে দায়িত্বে থাকা বনবিভাগের কর্মকর্তা মোশাররফ স্যারকে ১০ হাজার টাকাও দেই।
তারা প্রতিদিন এখানে আসতো। গাছ দেখতো। কিন্তু আজকে হঠাৎ এসে আমার প্রায় ১০ হাজার গাছ উপড়ে ফেলল। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি। হাত-পা ধরেছি। কিন্তু তারা শোনেনি। এখন আমার গাছ উপড়ে ফেলছে। আর আমাকে বারবার মামলার হুমকি দিয়ে গেছে।”
দেলোয়ারের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, “আমি স্বামীর সঙ্গে এই জায়গায় কাজ করছি। বীজ রোপণ করেছি। টাকা নেই। তাই আমি তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। এখন এই টাকা কি দিয়ে দেব। আমি এই ক্ষতিপূরণ চাই। না হয় আমার মরণ ছাড়া উপায় নেই।”
কলাপাড়া উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বেড়িবাঁধের ঢালে চাষাবাদ বিষয়ে অবগত রয়েছেন।
তিনি বলেন, “ওই কৃষক বন বিভাগের কেয়ারটেকারকে নাকি উপঢৌকন দিয়ে তরমুজ লাগিয়েছিলেন। এখানে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বিষয় নেই।
“তবে প্রকল্পের মাঠ প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম মাঠে গিয়ে এ অবস্থা দেখে তার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন যে, তরমুজ গাছ থাকলে ইঁদুর বাঁধের ক্ষতি করবে। বাঁধের ক্ষতির জন্য এ গাছগুলি উচ্ছেদ করেছেন মনিরুল। তবে তিনি আমাকে জানাতে পারতেন।”
এ ঘটনায় তারা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জানান আরিফ হোসেন। তবে প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম তরমুজ গাছ কাটার কথা অস্বীকার করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর জুনে ৪৮ মিটার ঢাল রেখে সাড়ে তিনশ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধ মজবুত করার জন্য সেখানে ঘাস লাগানো হয়েছে এবং বনায়ন করার জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে কৃষক দোলোয়ার গাছ লাগিয়েছেন, যার কারণে ঘাস মারা গেছে।
“কৃষককে ডেকে জিজ্ঞাসা করালাম, ‘আপনি এগুলো কী করেছেন? ঘাস তো মারা গেছে।‘ তখন কৃষক দোলোয়ার আমাকে বললেন, ‘আমি বনবিভাগের বিট অফিসার মোশারফকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি।’ তখন মোশারফ উপস্থিত ছিলেন। মোশারফ বললেন, ‘আমি তোমাকে কয়েকটা চারা লাগাতে বলেছি। পুরা জায়গায় কোপাতে বলিনি।’ তবু আমি ভালো গাছগুলো তুলতে দেইনি।”
মনিরুলের দাবি, “কৃষক দেলোয়ার যত গাছের কথা বলেন অত গাছ কাটা হয়নি। ওখানে আমি গুনে দেখেছি, ৬৪৬টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা মোশারফই এ জন্য দায়ী।”
গঙ্গামতি বিটের বন কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি কৃষক দেলোয়ার খলিফাকে আগেই সতর্ক করেছিলেন দাবি করে বলেন, “আমি বাধা দিতে গেলে দেলোয়ার আমাকে পাত্তা দেননি। দেলোয়ার বলেন, ‘আমি এখানে অনেক দিন ধরে চাষাবাদ করছি। আমি আওয়ামী লীগ করি।’ আর টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি।”
সিএসবি-টুয়েন্টিফোর-২০/১/২২,ঢ-০/
পাঠকের মতামত